প্রাণীবিদ্যা বিভাগ সম্পর্কে

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে কোন কিছুই কল্পনা করা যায় না।বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণেই পৃথিবীতে মানুষ অজানাকে জানার মাধ্যমে বিভিন্ন কঠিন কাজকে সহজ করে মানব কল্যাণে ব্যবহার করছে।
প্রাণিবিদ্যা বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যেখানে বিভিন্ন প্রাণী সম্বন্ধে গবেষণা করে তাদেরকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো হচ্ছে। প্রাণিবিদ্যা বিভাগ বৈচিত্র্যময় জীবের গবেষণা করে তাদেরকে মানব কল্যাণে প্রয়োগের মাধ্যমে তাত্তীক জ্ঞানের পাশাপাশি ফলিত দিকগুলিতে সফলতা অর্জনে সহায়তা করছে।অর্থনৈতিক প্রাণিবিজ্ঞান,জেনেটিক্স,মলিকুলার বায়োলজি,জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি; প্যারাসাইটোলজি,ফিজিওলজি,ইকোলজি, মাক্রোবায়োলজি,জীন থেরাপি,উঘঅ ফিঙ্গার প্রিন্টিং ইত্যাদি বিষয়ে ছাত্রীরা জ্ঞান অর্জন করছে।
ইডেন মহিলা কলেজ ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত,যা প্রকৃত পক্ষে মেয়েদের স্কুল হিসেবে জন্মলাভ করে।পরবর্তীতে ১৮৭৮ সালে গর্ভনর স্যার এ্যামেলে ইডেনের নামেই নামকরণ হয়।১৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯২৬ সালে কলেজটি তার যাত্রা শুরু করে।১৮ একর জায়গার উপর এই কলেজটি এখনও স্বগৌরবে অবস্থান করছে।১৯৭৩ সালে মাত্র ১৩ জন ছাত্রী নিয়ে এ বিভাগে সম্মান ক্লাস চালু হয় এবং ১৯৮২ সনে মাস্টার্স চালু করা হয়।কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি সম্মান ক্লাসে ১৬০টি সিট এবং মাস্টার্সে ১৭৫টি সিট আছে।সকল বর্ষে সম্মিলিতভাবে ১০০০ এর মত ছাত্রী পড়াশুনা করছে। এ বিভাগের ছাত্রীরা প্রথম থেকেই কৃতিত্বের সাথে ভাল ফলাফল করছে।আমাদের ছাত্রীরা এখান থেকে পাশ করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারে এবং দেশে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক , সরকারী ও বেসরকারী কলেজ, সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন কর্ম পরিবেশে সাফল্যের সাথে কর্মজীবন পালন করছে।এছাড়া বাংলাদেশের বাহিরেও বিভিন্ন দেশে আমাদের ছাত্রীরা উচ্চতর শিক্ষা অর্জনসহ কর্মজীবন পালন করছে।বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের এই বিভাগ থেকে পাস করা আমিসহ আরো চার জন এই বিভাগে কর্মরত আছি।
ইডেন মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগটি একাডেমিক ভবন ২ এর তৃতীয় তলায় অবস্থিত।এই বিভাগে ৩টি ল্যাবরেটরী ও ৪টি ক্লাসরুম রয়েছে।তিনটি ল্যাবক্লাসের মধ্যে একটি ল্যাব অনার্স শিক্ষার্থীদের জন্য এবং একটি মাস্টার্স (মৎস্যবিজ্ঞান)শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ।অন্য ল্যাবটিতে কীটত্বত্ত বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া হয়।
মাস্টার্স এর ক্ষেত্রে এই বিভাগে দুটি শাখা আছে, একটি মৎস্যবিদ্যা শাখা ও অন্যটি কীটত্বত্ত শাখা।বর্তমান পাঠ্যসূচীতে ৩য়বর্ষ, ৪র্থ বর্ষ ও মাস্টার্স শ্রেণীতে ব্যবহারিক কোর্সে Genetics, cell and molicular biology ,Genetic engineering and biotechnology ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবহারিক ক্লাস অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।কিন্তু এই বিষয়ের ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়ার জন্য অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরী ও যন্ত্রপাতি প্রয়োজন যা আমাদের বিভাগে নেই বিধায় এখন পর্যন্ত এই ক্লাসগুলো নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।তাই কর্তৃপক্ষ যদি একটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরী এবং শিক্ষকদের উক্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তাহলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে এবং বিভাগ আরও উন্নত হবে।এছাড়া শিক্ষকদের বসার রুম ,বিভাগীয় প্রধান এর কক্ষ, একটি স্টোর রুম ও একটি সেমিনার রুম আছে। সেমিনারে ২০২৩ সালে ফেব্রæয়ারি মাসে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।সেমিনারে দুটি কর্ণারের উদ্বোধন করা হয়েছে। একটি ড. আয়েশা খাতুন কর্ণার এবং অন্যটি সততা কর্ণার। ড. আয়েশা খাতুন আপা প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জন্য অনেক অবদান রেখে গেছেন । ড. আয়েশা খাতুন আপা প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্রীদের উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য মেধাবৃত্তির ব্যবস্থা করে গেছেন।তাই ছাত্রীরা এই কর্ণারের মাধ্যমে ড. আয়েশা খাতুন আপার সম্পর্কে এবং এই বিভাগে উনার অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে।২০২৩ সাল থেকে পুনরায় ড. আয়েশা খাতুন মেধাবৃত্তি চালু হয়েছে। এছাড়া সততা কর্ণারের মাধ্যমে ছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে সৎ গুণাবলি অর্জন করতে পারবে। সততা কর্ণারে ছাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ছাড়াও প্রয়োজনীয় ঔষধ ও প্রেসার মাপার যন্ত্র আছে।যাতে করে প্রত্যেক ছাত্রী সততার সাথে এই কর্ণারটি ব্যবহার করে নিজেদের নিজেদের সততার পরিচয় দিবে এবং এই সততার প্র্যাকটিস তারা সারা জীবন ধরে রাখবে এই উদ্দেশ্যে এই কর্ণারটি তৈরী করা হয়।সেমিনারে ছাত্রীদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।সেমিনারে শিক্ষক ও ছাত্রীদের জন্য প্রায় চার হাজার বই রয়েছে।এই বইগুলোর মধ্যে দেশী বিদেশী বিভিন্ন লেখকের পাঠ্যসূচীর অর্ন্তভুক্ত বিষয়ের বই রয়েছে।এছাড়া প্রতি বছরই নতুন নতুন বই সংযোজন করা হয়। পাঠ্যসূচীর অর্ন্তভুক্ত বই ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের বই যেমন ঃ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ,স্বাধীনতা যুদ্ধ বিষয়ক বই,জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবনী ,বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রচুর বই সেমিনারে রয়েছে।ফলে ছাত্রীরা এসব বই পড়ে বাংলাদেশ ও আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে।সেমিনারে ছাত্রীদের জন্য ২টি দৈনিক পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে,একটি বাংলা ও একটি ইংরেজী পত্রিকা।
এই বিভাগে ছাত্রীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওযার জন্য ও তাদের সমস্যাগুলো তুরে ধরার জন্য একটি অভিযোগ বক্স রাখা আছে। এই বিভাগে ছাত্রীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন দিবস উদ্যাপনে অংশগ্রহণ করে থাকে,এছাড়া খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ-গান,হামদনাত,কবিতা আবৃত্তি, বিজয় মেলা,দেয়ালিকা,বিতর্ক ও অন্যান্য বিষয়েও স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে সফলতা অর্জন করছে।এছাড়া প্রতিটি বর্ষেই ছাত্রীদের পাঠ্যসূচীর পাঠকে আনন্দদায়ক করে তোলার জন্য পাঠ সংশ্লিষ্ট বিষয়েই কুইজ প্রতিযোগিতা,মাইক পাসিং ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থারাখা হয়।এতে ছাত্রীদের মধ্যে অনেক উৎসাহ দেখা যায়। ছাত্রীদেরকে রুটিন অনুযায়ী কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে,ক্লাসের মাধ্যমে তাদের শারীরিক,মানসিক ও অন্যান্য বিষয়ে কাউন্সিলিং করা হয়। এই বিভাগের ছাত্রীদেরকে উন্নত মানব সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রতিটি শিক্ষক অক্লান্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
প্রানিবিদ্যা বিভাগে শিক্ষকদের পদ আছে মোট ১২টি এবং প্রদর্শক পদ ২টি।বর্তমানে বিভাগীয় প্রধানসহ ১৪ জন শিক্ষক রয়েছেন।এছাড়া একজন সেমিনার সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ,একজন ল্যাব এসিস্ট্যান্ট আছে এবং চারজন মাস্টাররোলে নিয়োগ করা কর্মচারী আছে। সর্বশেষ প্রাণিবিদ্যা ছাত্রীদের ফলাফল ও অর্জন এখানে উল্লেখ করা হল-

ক্রমিক নং পরীক্ষা বর্ষ সেশন মোট পরীক্ষার্থী পাশের হার বর্তমান বর্ষ
1. 1st  Year -2020 2019-20 117 79% 3rd Year,2nd Year এর রেজাল্ট অপ্রকাশিত
2. 2nd Year- 2020 2018-19 86 100% 4rd Year,3rd Year এর রেজাল্ট অপ্রকাশিত
3. 3rd Year-2020 2017-18 73 97% রেজাল্ট পূর্ন প্রকাশিত
4. 4th Year -2021 2017-18 71 80% M.Sc. -2021-22
5. 4th Year -2020 2016-17 65 85% M.Sc. -2020-21

অর্জন -২০২২ সালে বিজয় দিবসে আয়োজিত বিজয় মেলায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রথম স্থান অর্জন করে। এই বিভাগের ছাত্রী- নির্জনা আক্তার ও রিমা আক্তার(২০২২-২০২৩ বর্ষ) সিনিয়র স্কাউট হিসেবে সম্মাননা স্মারক অর্জন করে।
বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য এবং উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী বেগম এই বিভাগের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সর্বদা সহযোগীতা এবং সঠিক নির্দেশনা দিয়ে আমাদের কাজকে সহজ করে দিচ্ছেন।আমি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ও ইডেন মহিলা কলেজের উন্নয়নের সাথে সাথে বিভাগের ছাত্রীদের সফলতা আরও বৃদ্ধি পাক এই প্রত্যাশাই করছি।