রসায়ন বিভাগ সম্পর্কে

এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন নামকরা বৃহৎ নারীবিদ্যাপীঠের মধ্যে অন্যতম ইডেন মহিলা কলেজ। বেগম রোকেয়ার হাত ধরে নারী শিক্ষার যে জাগরণ বাংলাদেশে বর্তমান আছে, প্রায় ২৪,০০০ ছাত্রী নিয়ে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই কলেজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে গর্ব ভরে। বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার জন্য ১৯৫০ সালে যাত্রা আরম্ভ করে বিজ্ঞান অনুষদ। এই অনুষদের সূচনালগ্ন থেকে রসায়ন বিভাগ ছাত্রীদের রসায়ন জ্ঞান দান করে যাচ্ছে।

ঐতিহ্যবাহী রসায়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান ছিলেন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ড. মালেকা-আল-রাজী। ১৯৭৬ সালে তার অবসর গ্রহণের পর বিভাগের কান্ডারী হন প্রখ্যাত শিক্ষাব্রতী প্রফেসর রাজিয়া বেগম। পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন নামকরা শিক্ষকরা এই বিভাগে এসেছেন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে রসায়ন বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে তাদের সমৃদ্ধ করেছেন।

প্রথমদিকে শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে রসায়ন বিষয়ের ক্লাশ হতো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ১৯৭২- ৭৩ শিক্ষাবর্ষে রসায়ন বিষয়ের উপর চার বছরের অনার্স কোর্সআরম্ভ হয় এবং ১৯৭৪ সালে মাস্টার্স কোর্স পর্যন্ত উন্নীত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা অবস্থায় এই বিভাগে বি. এসসি (পাস) এবং মাস্টার্স ১ম পর্ব কোর্সও চালু ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ শিক্ষার মান বৃদ্ধির নিমিত্তে ইডেন কলেজ যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন থেকে এই বিভাগে শুধুমাত্র বি. এসসি (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ক্লাশ হয়। বর্তমানে রসায়ন বিভাগে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৬০০। এছাড়া পদার্থ, উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রায় ১২০০ ছাত্রীর নন-মেজর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাশ নেয়া হয়।

এ বিভাগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রথিতযশা শিক্ষকরা এসেছেন। তারা সর্বদা তাদের একাডেমিক যোগ্যতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতায় রসায়ন বিভাগকে উন্নত করেছেন সফলতার সাথে। বর্তমানে একজন অধ্যাপক বিভাগীয় প্রধান হিসেবে বিভাগের যাবতীয় একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়া বিভাগের বাকী ১১ টি পদে 11জন সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক পদমর্যাদার শিক্ষক রয়েছেন।তাঁরা সকলেই দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষার মাধ্যমে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেছেন। প্রত্যেক শিক্ষক আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং তারা তাদের ছাত্রীদের পড়াশোনার প্রতি যত্নশীল। বিভাগের শিক্ষা অনুকূল পরিবেশ শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায়ী ও ভবিষ্যৎ জীবনে সফল হতে উৎসাহিত করে। এই বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে একজন পিএইচডি ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষকও আছেন, যিনি রসায়ন গবেষনায় সর্বদা ছাত্রীদের অনুপ্রানিত করে যাচ্ছেন। এছাড়া একজন সেমিনার সহকারী, দুজন দক্ষ বেয়ারা, দুজন পিয়ন আছে।

নারী উচ্চশিক্ষায় অবদান রাখা রসায়ন বিভাগে আছে ৩টি ক্লাশরুম, ১টি গ্যালারী, ৪টি আধুনিক, সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরী, ১টি স্টোর, ১টি সেমিনার রুম, ১টি বিভাগীয় প্রধানের কক্ষ ও ১টি শিক্ষকমন্ডলীর কক্ষ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষনার সাথে সঙ্গতি রেখে গত ১৮/০৭/২০১৪ খ্রি. তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অধ্যক্ষ মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে সেমিনার ফান্ডের সহায়তায় বিভাগের ২টি ক্লাশ এবং ১টি ল্যাবরেটরীকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ রুমে পরিণত করা হয়েছে।

প্রতিবছর এই বিভাগের শিক্ষকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ছাত্রীরা তাদের অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফলে অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। প্রথমদিকের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভাগের কৃতি ছাত্রী কোহিনূর বেগম বি. এসসি (অনার্স) ১ম সনাতন পরীক্ষায় ২য় শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর মধ্যে বি. এসসি (অনার্স) পরীক্ষায় হাছিনা বেগম ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করে। পরবর্তী বছরগুলোতেও এই বিভাগের ছাত্রীরা তাদের সফলতা বজায় রেখেছে সমানতালে। সম্প্রতি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষার্থী  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের মধ্যে প্রথম এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের বি. এসসি (অনার্স) পরীক্ষায়  প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। যা সত্যিই অন্য সকলের কাছে প্রশংসার দাবী রাখে।  এছাড়া আরও অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে তাদের শিক্ষা জীবন শেষে বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমেও ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ঈর্ষণীয়।

তবে এই বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও যেতে হয়। প্রায় ৬০০ মেজর পর্যায়ের ছাত্রী আর ১২০০ নন-মেজর পর্যায়ের ছাত্রীদের জন্য এই ৩টি ক্লাশরুম এবং ৪ টি ল্যাব খুবই নগন্য। মাঝে মাঝে পর্যাপ্ত রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি পাওয়া সম্ভব হয়না।

কিছু অপ্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষকরা সর্বদা তাদের ছাত্রীদের জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে তারা একজন আলোকিত ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। সর্বোপরি দেশের রসায়ন শিল্পের উন্নয়নের ধারায় একজন সফল রসায়নবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারে।

রসায়ন বিভাগ

প্রফেসর সাবিনা ইয়াছমিন

বিভাগীয় প্রধান