উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ সম্পর্কে

১৯৯৪ সনে ইডেন মহিলা কলেজের অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত একটি অনন্য বিভাগ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ। শতবর্ষের প্রাচীন এই ইডেন মহিলা কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগটি তার স্বমহিমায় উজ্জ্বলতর অবস্থানে অবস্থিত । আমাদের জীবনের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য আমরা উদ্ভিদের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভলশীল । পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও উদ্ভিদের ভূমিকা অপরিসীম । উদ্ভিদ ছাড়া যেমন মানুষ ও প্রাণীজগৎ অকল্পনীয়,উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ ছাড়াও তেমন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা করা যায় না। উদ্ভিদ আমাদের জীবনের সংগে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত , ঠিক একইভাবে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়টিও ছাত্রীদের কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় ও আকর্ষণীয় একটি বিষয় । অধিকাংশ ছাত্রীদের ভর্তির সময় অন্যতম পছন্দের বিষয় হিসেবে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়। মানবকল্যান সাধনে উদ্ভিদবিজ্ঞানের জ্ঞান একটি অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া । তাই নিত্যনতুন জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মানবজীবনের কল্যান সাধনের বিভিন্ন দিক জানার জন্য ছাত্রীরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে এই বিষয়টি অধ্যয়ন করে।

সবুজে ঘেরা উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগটি কলেজের ২নং ভবনে দোতলায় অবস্থিত । এই বিভাগে মোট ৪টি ক্লাশরুম, ২টি ল্যাব ও ১টি সেমিনার কক্ষ রয়েছে । সেমিনার কক্ষটি দেশীবিদেশী বহু প্রয়োজনীয় বই এবং জার্নালে সমৃদ্ধ । এছাড়াও এই বিভাগে একটি বিভাগীয় প্রধানের কক্ষ, একটি শিক্ষকবৃন্দের কক্ষ ও একটি স্টোররূম রয়েছে । উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাসের সুবিধার্থে এবং উদ্ভিদবৈচিত্র সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জনের জন্য এই বিভাগের একটি নিজস্ব বাগান রয়েছে , যেখানে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ । এছাড়া জলজ উদ্ভিদের জন্য একটি চৌবাচ্চা ও অর্কিড,ক্যাকটাস সংরক্ষনের জন্য একটি নেটহাউজও আছে । নেট হাউজটি প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মাকসুদা বেগমের স্বউদ্দ্যোগে স্থাপিত হয়। শুরুতে এই বিভাগে ছিল শুধুমাত্র এইচ,এস সি ও বি,এস,সি (পাস) কোর্স । বর্তমানে উভয় কোর্সই আর চালু নাই । ১৯৭২ সাল থেকে এই বিভাগে বিএস.সি (সম্মান) কোর্স এবং ১৯৮৪ সাল থেকে স্নাতকোত্তর শেষপর্ব কোর্স চালু হয় । বর্তমান এই বিভাগে প্রায় ৮০০ ছাত্রী অধ্যায়নরত।সম্মান ১ম বষের্র আসন সংখ্যা ১৫০টি এবং মাষ্টার্স শেষ পর্বে আসন সংখ্যা ১৭৫টি। প্রতি বছর এই বিভাগ থেকে প্রায় ২০০ জন ছাত্রী বের হয় । এদের মধ্যে অনেকেই আজ কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সম্মানযোগ্য পদে কর্মরত আছে। এই বিভাগের চরম সাফল্যের পিছনে যার অবদান অনস্বীকার্য তিনি হচ্ছেন প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ও মরহুম অধ্যাপক নাইয়ার সুলতানা । তিনি বর্তমান জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরীর একজন গর্বিত মাতা। এছাড়াও তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক ও সরকারী কর্মকমিশনের প্রাক্তন সদস্য ছিলেন । তিনি প্রায় তিন দশক (১৯৬৭-১৯৯৬) ধরে আমাদের এই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
শিক্ষাকার্য ক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বর্তমানে এই বিভাগে মোট ১৫ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এর মধ্যে আমি সহ মোট ০৪ জন শিক্ষক এই বিভাগেরই প্রাক্তন ছাত্রী। বিভাগের অভিজ্ঞ, মেধাবী ও নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকবৃন্দ ডিজিটাল ও মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে স্নাতক সম্মান ও মাষ্টার্স কোর্সে মানসম্পন্ন পাঠদান করে থাকেন। ইতিমধ্যে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে থিসিস গ্রুপে কয়েকটি ব্যাচ পাশ করে বেরিয়েছে । এই বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. অর্চ্চনা দত্ত- এর অধীনে ২ জন ছাত্রী এবং অধ্যাপক ড. নাহিদ মনসুর – এর তত্ত¡াবধানে ৭ জন ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঈঝওজ এ অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে তাদের থিসিস সম্পাদন করেছে । এদেও গবেষণামূলক রচনাও প্রকাশিত হয়েছে । বর্তমানে অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী নূর এর তত্ত¡াবধানে ৩ জন ছাত্রী থিসিস গবেষণারত আছে।
বিগত ৩ বৎসরের মাস্টার্স শেষ পর্বের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ২০১১, ২০১২ও ২০১৩ সনের ফলাফলে ১ম শ্রেণী প্রাপ্তির সংখ্যা যথাক্রমে ৬২ জন (১৪৬ জনের মধ্যে), ১০২ জন (১৩৪ জনের মধ্যে ) , ৯৩ জন ( ১৩৩ জনের মধ্যে) এবং পাশের হার যথাক্রমে ৯৩% , ৯৪% এবং ৯৫.৪%।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২জন প্রাক্তন ছাত্রী, রোকসানা বেগম ও শাহরীন লায়লা হোসেন সেমিনার সহকারী ও ল্যাব সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে । এছাড়া ২ জন চতূর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও ১জন মালী বর্তমানে কর্মরত আছেন ।
প্রতি বৎসরই উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে প্রত্যেক বর্ষের জন্য শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয় । সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত থাকায় এবং তাত্তি¡ক জ্ঞানের সাথে ব্যবহারিক জ্ঞানকে পরিপূর্ণভাবে আহরণের জন্যই এই শিক্ষাসফর। শিক্ষকবৃন্দের তক্তাবধানে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে শিক্ষাসফরের প্রাকৃতিক পরিবেশে বিভিন্ন ধরণের বৃক্ষ, গুল্ম, বীরুৎ, জলজ উদ্ভিদকূলের সংস্পর্শে এসে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করে । জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে তাদের উদ্ভিদ সংগ্রহের ভান্ডারও পরিপূর্ণ হয় ।
বর্তমান সুযোগ্য অধ্যক্ষ প্রফেসর সুপ্রিয়া ভট্রাচ্চার্য এবং উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী বেগম এর নেতৃতে¦ চলছে ইডেন মহিলা কলেজ আধুনিকায়ন । তাঁদের উত্তোরোত্তর সাফল্য কামনা করি । এছাড়া যাঁদের আন্তরিকতায় ও দক্ষতায় এই উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ বিকশিত, প্রস্ফুটিত ও সাফল্যমন্ডিত হয়েছে , তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ । এই বিভাগ থেকে পাশ করে ছাত্রীরা নিজেদের কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে যে কোন কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে এবং ফুলের মত সৌরভ ছড়িয়ে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সাফল্যমন্ডিত হবে- এই প্রত্যাশাই রইল ।
এ বছরই (২০২৩ খৃ:) এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সার্ধশত বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। ১৮৭৬ সালে যাত্রা শুরু করে সেই ছোট্ট পাঠশালাটি নিজ পরিধি অতিক্রম করে আজ বিশাল মহীরুহ । বহু মহীয়সী বিদূষী নারী এই শিক্ষা এই শিক্ষায়তনে তাঁদের পাঠ গ্রহণ করেছেন । বিগত শতাব্দীর অর্জন নিয়ে আমরা গর্ব করি । আমরা বিশ্বাস করি বিগত শতাব্দীর অপূর্ণ আশা- আকাঙ্খা আগামী দিনের ইডেনের ছাত্রীরা পূরণ করবে ।