ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ সম্পর্কে

ইতিহাস তুলে ধরে যে কোনো দেশ ও জনগোষ্ঠীর কীর্তিমান অতীত, ঐশ্বর্যমন্ডিত সংস্কৃতি ও বর্তমান কালপর্বের চলমান ঘটনাবলি। ইতিহাস ছাড়া জ্ঞানচর্চা সম্পূর্ণ হয় না। ইতিহাস থেকেই মানুষ জানতে পারে অতীতের রাজনৈতিকসহ আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড, যা ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে জানার একটি পরিপুর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি। এই বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে-ইউরোপ, এশিয়া ,আফ্রিকা তথা সমগ্র বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের উত্থান-পতনের ইতিহাস, মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এবং সমসাময়িক অন্যান্য জাতি ও জনগোষ্ঠির ইতিহাস-ঐতিহ্য। বিশ্বের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সভ্যতার উথান-পতন, প্রত্নতত্ত্ব , শিল্পকলা ও স্থাপত্যের ইতিহাস ছাড়াও প্রাচীন বঙ্গদেশ থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বর্তমান পর্যন্ত বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য এই বিষয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত।

উনবিংশ শতকের আশির দশকে ব্রাক্ষ্ম সমাজের মেয়েদের শিক্ষা প্রদানের জন্য বেশ কটি বাসাবাটিতে ঘরোয়া ভাবে পড়াশোনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় । ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরবর্তী সময় একত্রিত হয়ে ‘ঢাকা ফিমেল স্কুল’ নামে অত্মপ্রকাশ করে। এ মহতী উদ্যোগে যিনি অবদান রেখেছিলেন তিনি হচ্ছেন Miss Marry Carpenter. এই মহিয়সী নারীর প্রচেষ্টায় এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে ঢাকা ফিমেল স্কুলটি ১৮৭৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে সরকারিকরণ করা হয় এবং স্কুলটির নামকরণ করা হয় তৎকালিন গভর্ণর জেনারেল স্যার অ্যাশলে ইডেন এর নামানুসারে ইডেন গার্লস স্কুল । ১৯২৬ সালে স্কুলটি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে উন্নীত হয়। ১৯৬২ সালে বর্তমান আদি বিল্ডিংটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং এ বছরই ইডেন কলেজে ডিগ্রি শাখা এবং ১৯৬৩ সালে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে ১৯৮১ সালে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নার্গিস আক্তার বানু ও অন্যান্য শিক্ষকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় স্নাতক সম্মান কোর্স চালু হয়। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মাসুদা আহমেদ এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয় । এ ছাড়া এ বিভাগে ১৯৯৫ সাল থেকে মাস্টার্স প্রিলিমিনারী কোর্স চালু আছে।

মাত্র কয়েকজন ছাত্রী নিয়ে এ বিভাগের পদযাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণিতে প্রায় ১৫০০ ছাত্রী অধ্যায়নরত আছে। এই বিভাগে বর্তমানে ১৬ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন, যারা প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ ও দক্ষ এবং স্ব স্ব মহিমায় মহিমান্বিত। ছাত্রীদের বিষয়ভিত্তিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে এই বিভাগে রয়েছে ঐতিহাসিক তথ্যসমৃদ্ধ দেশি-বিদেশী বিভিন্ন লেখকের দুর্লভ বইসহ সমৃদ্ধ একটি সেমিনার। সেমিনার পরিচালনায় বিভাগের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাশাপাশি একজন সেমিনার সহকারী কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন এ বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষকদের বসার স্থানস্বল্পতা ছিল। সম্প্রতি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের আন্তরিক সহোযোগিতায় এ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের কক্ষ, বিভাগীয় শিক্ষকদের কক্ষ এবং ছাত্রীদের সেমিনার কক্ষটি সংস্কার করে সুপরিসর ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এজন্য অধ্যাপক মহোদয়কে জানাই বিভাগের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞ। এছাড়াও ছাত্রীদের নৈতিক চরিত্র উন্নয়নের জন্য বিভাগের সেমিনারে “সততা কর্নার” প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ছাত্রীরা নিজেরা এন্ট্রি দিয়ে সততা কর্ণার হতে বই নিবে এবং নিজেদের দায়িত্বে জমা দিবে। যা ছাত্রীদের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের আত্মনির্ভরশীল হতে সহয়তা করবে।

আধুনিকায়নের এই যুগে সকল কার্যক্রম ডিজিটালাইজড হওয়ার কারণে বিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রম দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভাগে রয়েছে ২টি ডেস্কটপ, ২টি ল্যাপটপ। এই বিভাগে ৩টি শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে একজন কম্পিউটার অপারেটর। এছাড়া বিভাগের সার্বিক কাজের জন্য রয়েছে ২জন এম.এল.এস.এস।

১৯৮১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি চূড়ান্ত পরীক্ষায় এই বিভাগের ছাত্রীরা কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করে আসছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি কলেজে অনুষ্ঠিত সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমে এই বিভাগের ছাত্রীরা প্রতিবছর স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। শুধু কলেজেই নয় জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এই বিভাগের ছাত্রীরা অংশ নিয়ে পুরস্কার অর্জন করে কলেজ ও বিভাগের সুনাম বৃদ্ধি করে আসছে। এছাড়া কলেজের বি.এন.সি.সি,

রোভার স্কাউটের ইউনিট পরিচালনায় বিভাগের ২জন শিক্ষক সক্রিয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিভাগের ছাত্রীরা ও কলেজের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে আইন-শৃংখলা রক্ষাসহ সকল সহযোগিতামূলক ও সেবামূলক কাজে নিজেদের ভূমিকা রেখে চলেছে।

এই বিভাগ থেকে পাস করে ছাত্রীরা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজ প্রতিষ্ঠিত। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে যে, এ বিভাগের ৫ জন প্রাক্তন ছাত্রী বর্তমানে এই বিভাগেই শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, উনারা হলেন প্রফেসর নাছিমা বেগম, জনাব সহিফা বানু ইভা-সহযোগী অধ্যাপক, জনাব নাজমুন নাহার-সহকারী অধ্যাপক, জনাব সাবিনা ইয়াসমিন-সহকারী অধ্যাপক, জনাব ফিরোজা বানু-সহকারী অধ্যাপক। এ ছাড়াও বিভাগে বর্তমানে আরও যে সকল শিক্ষক কর্মরত আছেন, তারা হলেন-অধ্যাপক সামছুন নাহার, অধ্যাপক রেহেনা পারভীন, জনাব আখতারী জামান-সহযোগী অধ্যাপক, ড. মোছা: তছলিমা খাতুন-সহযোগী অধ্যাপক, জনাব সুলতানা জেসমিন আরাবী-সহযোগী অধ্যাপক, সেলিনা নাহার-সহকারী অধ্যাপক, জনাব সোহেলী সুলতানা –সহকারী অধ্যাপক, জনাব তামান্না সুলতানা -সহকারী অধ্যাপক, জনাব জাহানারা খাতুন-সহকারী অধ্যাপক ও জনাব নার্গিস সুলতানা-প্রভাষক। বিভাগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যে সকল শ্রদ্ধাভাজন ও গুণী শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টা ও দিক নির্দেশনায় আজকের এই গৌরবদীপ্ত বিভাগ, তাদের স্বশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি। তাদের মধ্যে যারা বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন তাঁরা হলেন- জনাব নার্গিস আক্তার বানু সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক মাসুদা আহমেদ,অধ্যাপক রাশেদা ওয়ায়েজ,জনাব হাসনাহেনা বেগম সহযোগী অধ্যাপক(ভারপ্রাপ্ত), অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম, অধ্যাপক দিলওয়ারা বেগম, অধ্যাপক সেলিনা বেগম, অধ্যাপক বিলকিস আজিজ, অধ্যাপক মুজিদা আফরোজ ও অধ্যাপক জসীম উদ্দীন ভূঞয়া তারা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে পারদর্শী এবং বিশেষ গুণের অধিকারী ছিলেন। বিভাগীয় প্রধান ছাড়াও এ বিভাগের গৌরব বৃদ্ধিতে যাদের ভূমিকা অনন্য তারা হলেন- জনাব জাহানারা বেগম নওরোজ সহযোগী অধ্যাপক, জনাব জোহরা বেগম সহযোগী অধ্যাপক, জনাব তাহেরা বেগম সহযোগী অধ্যাপক, জনাব মাসরুরা খানম সহযোগী অধ্যাপক, জনাব জাহানারা বেগম সহকারী অধ্যাপক, জনাব শাহানারা বেগম সহকারী অধ্যাপক, জনাব আমেনা বেগম সহকারী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক মোছা: রাহিমা আক্তার খাতুন। সবশেষে কলেজের অভিজ্ঞ, নিষ্ঠাবান ও সর্বোজন শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য ও উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম এর সার্বিক তত বধানে বিভাগের সার্বিক উন্নয়নসহ সকল ছাত্রীদের আমরা যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারি, যাতে তারা ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে এক একজন পরিপূর্ণ ও আলোকিত মানুষ হতে পারে। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে এই প্রার্থনা রইলো।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
ড. হোসনে আরা পারভীন
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান